সবুজ, লাল, নীল… প্যাকেটে থাকা রঙিন চিহ্নগুলোর মানে জানেন?—ভুল খাবার বেছে নেওয়ার আগেই জেনে নিন এই সংকেতগুলোর ভাষা
সুপারশপ বা পাশের মুদি দোকানে গিয়ে প্যাকেটজাত খাবার কেনা আমাদের নিত্যদিনের ব্যাপার। কেউ দেখেন ক্যালোরি, কেউ আবার মেয়াদ। কিন্তু খাবারের মোড়কে থাকা ছোট্ট কিছু রঙিন চিহ্ন কি আপনার চোখে পড়েছে কখনো? সবুজ, লাল, নীল বা হলুদ রঙে আঁকা সেই গোল বা চৌকো চিহ্নগুলো?
অনেকে ভাবেন এগুলো বুঝি শুধু প্যাকেজিংয়ের অংশ বা নকশা। কিন্তু না—এই ছোট্ট চিহ্নগুলোতেই লুকিয়ে থাকে বড় তথ্য। কখনো চকোলেটের পেছনে থাকা সবুজ রঙের একটি চিহ্ন আপনাকে জানিয়ে দেয়—এটি নিরামিষ। আবার লাল রঙের চিহ্ন সতর্ক করে—এতে প্রাণিজ উপাদান রয়েছে।
এইসব রঙিন চিহ্ন কেবল একটি চেহারাগত বৈশিষ্ট্য নয়, বরং খাবারের ধরন, উপাদান, এমনকি কিছু ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যঝুঁকি পর্যন্ত নির্দেশ করে। যারা নিরামিষভোজী, ডায়াবেটিক রোগী, বা রাসায়নিক-সচেতন—তাদের জন্য এই চিহ্ন জানাটা একান্ত প্রয়োজন।
🔹 সবুজ চিহ্ন
খাবার নিরামিষ কিনা তা বোঝাতে ব্যবহৃত হয় সবুজ রঙের গোল বা চৌকো চিহ্ন। এতে কোনো প্রাণিজ উপাদান—যেমন ডিম, মাংস বা মাছ নেই। ভারতে FSSAI (Food Safety and Standards Authority of India) এই চিহ্নকে নিরামিষ পণ্যের জন্য বাধ্যতামূলক করেছে। বাংলাদেশেও কিছু প্রতিষ্ঠান এই স্ট্যান্ডার্ড অনুসরণ করছে।
🔴 লাল চিহ্ন
লাল রঙের চিহ্ন নির্দেশ করে, খাদ্যপণ্যটিতে প্রাণিজ উপাদান রয়েছে। যারা নিরামিষভোজী, তাদের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি নির্দেশক।
🔵 নীল চিহ্ন
ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য বিশেষভাবে তৈরি খাবারে ব্যবহৃত হয় নীল চিহ্ন। এটি বোঝায় যে পণ্যটিতে চিনি কম বা চিনিমুক্ত। আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশন (IDF) এই রঙের ব্যবহারকে সমর্থন করে।
🟡 হলুদ চিহ্ন
হলুদ চিহ্ন যুক্ত খাবারে সাধারণত ডিমজাত উপাদান থাকে। অনেক নিরামিষভোজী ডিম পরিহার করেন—তাদের জন্য এটি সহায়ক চিহ্ন।
⬛ কালো চিহ্ন
প্যাকেটে কালো রঙের আয়তাকার চিহ্ন থাকলে বুঝতে হবে, খাদ্যপণ্যে রাসায়নিক সংরক্ষক বা কৃত্রিম উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে। সব সময় এটি ক্ষতিকর নয়, তবে সচেতনতা জরুরি।
ভারতের Food Safety and Standards Authority of India (FSSAI) প্রথমবার এই রঙভিত্তিক চিহ্ন ব্যবস্থাপনার নিয়ম চালু করে। এটির মাধ্যমে নিরামিষ এবং আমিষ খাবারের পার্থক্য নির্ধারণ করা হয়। একই সঙ্গে ডায়াবেটিক ফ্রেন্ডলি খাবার বা রাসায়নিক উপাদানযুক্ত খাবারকেও রঙের মাধ্যমে আলাদা করা হয়। বাংলাদেশে এখনো এ বিষয়ে বাধ্যবাধকতা না থাকলেও অনেক আন্তর্জাতিক ও দেশীয় কোম্পানি এই পদ্ধতি অনুসরণ করছে।
📣 বিশেষজ্ঞ মত:
খাদ্য প্রযুক্তিবিদ ও প্যাকেজিং বিশেষজ্ঞদের মতে, “এই রঙিন চিহ্নগুলো মূলত দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক। যেসব ভোক্তা নির্দিষ্ট খাদ্য উপাদান পরিহার করেন, তারা খুব সহজে এসব চিহ্ন দেখে বুঝে নিতে পারেন কোন পণ্যটি তাদের জন্য উপযুক্ত।”
🧾 ভোক্তার করণীয়:
ভোক্তা হিসেবে আমাদের দায়িত্ব শুধু পণ্য কেনা নয়, বরং কী কিনছি, কেন কিনছি, তা বোঝা। এই রঙিন চিহ্নগুলো হয়তো ছোট, কিন্তু তথ্যের দিক থেকে দারুণ শক্তিশালী। পরবর্তীবার মুদি দোকানে যাওয়ার সময় আর শুধু দাম না দেখে, একবার চিহ্নগুলোর দিকেও নজর দিন।
আইটি সহায়তাঃ টোটাল আইটি সলিউশন