প্রতিযোগিতামূলক দাম এবং নতুন বাজার সৃষ্টির ফলে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম দশ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি প্রায় ১৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই সময়ে ২০ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এ বৃদ্ধি বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের একটি বড় মাধ্যম। প্লাস্টিক পণ্য শিল্পে নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার, গুণগত মানের উন্নয়ন এবং আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতামূলক দামের কারণে এ বৃদ্ধি সম্ভব হয়েছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, এই সময়ের মধ্যে আগের যেকোনো বছরের তুলনায় সবচেয়ে বেশি প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি হয়েছে। প্রধানত যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীন, ভারত ও নেপালে প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি করা হয়। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) গবেষণায় দেখা গেছে, প্যাকেজিং পণ্যের মধ্যে টেবিলওয়্যার ও কিচেনওয়্যার সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয়।
শামীম আহমেদ হলো বাংলাদেশ প্লাস্টিক পণ্য প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিপিজিএমইএ) সভাপতি তিনি বলেন, ‘এই খাতের রপ্তানি বৃদ্ধিতে মূল ভূমিকা পালন করেছে স্থানীয়ভাবে তৈরি প্লাস্টিক পণ্যের প্রতিযোগিতামূলক দাম । কাঁচামাল ইম্পোর্ট এবং ডলারের সংকটের জন্য এলসি করাতে অসুবিধা সত্ত্বেও এই খাত তার রপ্তানি অব্যাহত রাখতে পেরেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো এখন বিশ্বমানের প্লাস্টিক তৈরি করছে, যা বিদেশি ক্রেতাদের আকৃষ্ট করছে। এছাড়াও, নতুন বাজার সৃষ্টি হওয়ায় রপ্তানি বাড়ছে।’ শামীম আহমেদ আরও বলেন, বাংলাদেশের প্লাস্টিক শিল্প মূলত একটি এসএমই খাত হওয়ায় উদ্যোক্তারা বিদেশে যথাযথ মার্কেটিং করতে পারছে না। তিনি মনে করেন, সঠিকভাবে বিপণন করা গেলে রপ্তানি ১০০ শতাংশ বাড়ানো সম্ভব।
সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিদেশে অবস্থিত মিশনের মাধ্যমে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে নতুন বাজার খুঁজতে সহায়তা করা উচিত।’ এছাড়া, প্লাস্টিক খাতে কর্পোরেট ট্যাক্সসহ অন্যান্য করহার কমানোর প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন তিনি।
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের বিপণন পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল বলেন, ‘গত অর্থবছরে এই খাত থেকে রপ্তানি আশানুরূপ ছিল না। তবে ধারণা করছি, পশ্চিমা অর্থনীতি পুনরুদ্ধার হতে শুরু করায় এ বছর আরও উন্নতি হবে।’ তিনি জানান, ডলারের উচ্চ মূল্যের কারণে উৎপাদন খরচ প্রায় ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, ফলে মুনাফা কমেছে।
বিপিজিএমইএর ধারণা, দেশে পলিওলেফিনের উৎপাদন সুবিধা না থাকলেও প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বর্তমানে ১৪২টিরও বেশি পণ্য উৎপাদন করছে। বাংলাদেশ সাধারনত গার্মেন্টস এক্সেসরিজ, গৃহস্থালি সামগ্রী ও ফিল্ম প্লাস্টিক রপ্তানি করে। ব্যবসায়ীরা আশা করছে প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি এবছর ২৫ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে।
ইপিবির তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি হয়েছে ২০ কোটি ৯ লাখ ডলারের, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১৭ কোটি ডলার। আলোচ্য সময়ে প্রবৃদ্ধি ১৭.৮৭ শতাংশ। এবছর এই খাতে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ২৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার।
উল্লেখযোগ্য, প্লাস্টিক পণ্যের বাজারের আকার বিশ্বব্যাপী বর্তমানে ৬০০ বিলিয়ন ডলার।
আইটি সহায়তাঃ টোটাল আইটি সলিউশন